বোরো চাষে বিমুখ কৃষকরা, ঝুঁকছে ভুট্টা চাষের দিকে

উৎপাদন খরচ না ওঠায় মানিকগঞ্জে চলতি বোরো মৌসুমে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় ৫ হাজার হেক্টর কম জমিতে বোরো আবাদ চাষ হয়েছে। ফলে গতবারের চেয়ে ২৬ হাজার ১২৮ মে.টন চাল কম উৎপাদন হবে। দিন দিন জেলার ৭টি উপজেলাতেই বোরো আবাদ না করে কম খরচে বেশি লাভের জন্য ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছে।

কৃষকরা মনে করছেন ন্যায্য মূল্যে ধান বিক্রি না করতে পারলে মানিকগঞ্জে খাদ্য ঘাটতি দেখা দিতে পারে। যদিও কৃষি অফিস দাবি করছেন জেলার খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে ১৫ হাজার মেট্রিক টন চাল উদ্বৃত্ত থাকছে।

মানিকগঞ্জ কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৫ অর্থ বছরে মানিকগঞ্জের ৭টি উপজেলার ৫০ হাজার ৭ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ হয়েছিল। যাতে ২ লাখ ৪২ হাজার ৩ ৪৬ মে. টন চাল উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু এ চলতি ২০১৬ অর্থবছরে ৪৯ হাজার ৫শত ৯৫ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৪৫ হজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ৩৬১ হেক্টর কম।

এ বছর যদি আবহাওয়া অনুকূলে থাকে তাহলে ৪৫ হজার ২৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২ লাখ ১৬ হাজার ২১৮ মে. টন চাল উৎপাদনের আশা করা হচ্ছে। যা গতবারের চেয়ে ২৬ হাজার ১২৮ মে. টন কম চাল উৎপাদন হবে।

সাটুরিয়া উপজেলার খলিলাবাদ গ্রামের কৃষক মোহাম্মদ আলী গেতে জানান, প্রতি বছরই বোরো আবাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমরা আর্থিক ক্ষতির স্বীকার হচ্ছি। আমি ৩ বছর ধরে শুধু নিজেরা খাবারের জন্য বোরো চাষ করে বাকি জমিতে ভুট্টা আবাদ করছি। ভুট্টা আবাদ বোরো আবাদের চেয়ে পরিশ্রম ও টাকা কম লাগে, লাভও বেশি ।

একই উপজেলার কান্দাপাড়া গ্রামের কৃষক ছবুর উদ্দিন জানান, পানি সেচ, হাল, কীট নাশকের দাম বৃদ্ধি সর্বোপরি দফা দফায় শ্রমিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় এখন আমরা বোরো আবাদ করি না । কম সময়ে বেশি লাভ হওয়ায় ভুট্টা আবাদ করছি।

এ ব্যাপারে জেলার হরিরামপুর উপজেলার ধুলশুরা গ্রামের কৃষক মনির হোশেন জানান, আমার গ্রামের যে মাছে চোখ যতদুর যায় কয়েক বছর আগে বোরো আবাদ করা হত । এখন সে বিস্তীর্ণ জমিতে ভুট্টা আবাদ করা হচ্ছে। ধানের ন্যায্য মূল্য না পেলে কৃষকদেরই এক সময় চাল কিনে খেতে হবে।

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ- সহকারকী কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল কাদের জানান, ২০১৫ অর্থবছরে মানিকগঞ্জের ৭ টি উপজেলায় ১৪ হাজার ৮৮২ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছিল। এতে ১ লাখ ২ হাজার ৬৫ মে. টন ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল। কিন্তু এ চলতি ২০১৬ মৌসুমে মানিকগঞ্জে ২২ হাজার ৩ শত ৭৯ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। যা গতবারের চেয়ে ৭ হাজার ৪৯৭ হেক্টর বেশি জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে। এ বছর যদি আবহাওয়া ভালো থাকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৪১৫ মে. টন ভুট্টার ফলন হবে। যা গতবারের চেয়ে ৫১ হাজার ৭৩০ মে. টন বেশি উৎপাদন হবে।

এ ব্যাপারে মানিকগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ- পরিচালক মো. জামিলুর রহমান জানান, কৃষকরা ন্যায্য মূল্য না পাওয়াতে বোরো আবাদের চেয়ে বেশি লাভ হওয়ায় ভুট্টা আবাদের দিকে ঝুঁকছে। এটা শুধু আমাদের দেশে তা নয়। ভুট্টা বাংলাদেশে শুধু মাত্র গো খাদ্য হিসেবে ব্যবহার হতো কিন্তু এখন মানুষের খাদ্য তালিকায় চলে আসছে। তাছাড়া কম সময়ে ঝুঁকি কম থাকায় ভুট্টা আবাদ করছে। তবে আমরা কৃষকদের নিয়মিত বোরো আবাদের পাশাপাশি আউশ ও আমন ধানে চাষে উৎসাহ দিয়ে আসছি। কেননা এ দুই জাতের ধান উৎপাদনেও খরচ কম।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর